নিজস্ব প্রতিনিধি
এবি পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন; সব রাজনৈতিক দলই সংস্কার চায় কিন্তু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণের ফলে জনগণের মাঝে নানা প্রশ্নের তৈরী হচ্ছে। কারও কারও কথা শুনে মনেহয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন অপরাধ!
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পতিত স্বৈরাচারকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন জনাব তারেক রহমান।
২০২০ সালের ২ মে করোনাকালীন সময়ে এবি পার্টি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দলটির ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক,
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম, আম-জনতা দলের সভাপতি কর্ণেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শাহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সাউদ বিন ইউসুফ প্রমূখ।
লন্ডন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে জনাব তারেক রহমান আরও বলেন, ৫ই আগস্টের পূর্বে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সবাই ছিলাম এবং একসাথে সবাই মিলে ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদ পতনের পর নতুন অনেক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, আমরা তাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। স্বৈরাচার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন করেছি। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দল সংস্কার নিয়ে কার্যক্রম চলছে। সকল রাজনৈতিক দলই সংস্কারের পক্ষে, কিন্তু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণের কারণে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে। অনেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন পতিত আওয়ামীলীগকে পূনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে সেটা হয়তো আপনারা বিবেচনায় নেননি। নতুন পুরাতন সকল রাজনৈতিক দলকেই এখন জনগণের কল্যাণে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করে তারেক রহমান আরো বলেন; মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে হাসিনা এক ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছিলো। পতিত স্বৈরাচার আবার মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেখার বিষয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে! গনহত্যার বিচার, দূর্নীতিবাজদের গ্রেফতারসহ সব বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার রয়েছে এটি জানার। সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, দেশ বিরোধী কিছু করলে আপনাদেরকেও কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি এবি পার্টির জন্মদিনে এর নেতা-কর্মীদের সবার প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে একটি ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এদিক সেদিক সময় পার করছে, আবার নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ভেতরে মানবিক করিডোর নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা কোন বৃহৎ শক্তির বিরোধের মধ্যে পড়তে চাই না। বর্তমানে যা দেখা যাচ্ছে তা শুভলক্ষণ নয়। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক ছোট ছোট বিষয়ে আপনারা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেছেন কিন্তু মানবিক করিডোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপানার কারো মতামত নিলেন না। এটা কোন ভাবেই ভালো ফল বয়ে আনবেনা।
১২ দলের প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মানবিক করিডোর নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরু হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে গোটা জাতিকে অন্ধকারে রাখার বিষয়টি রহস্যজনক। আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই মানবিক করিডোরের আয়োজন করা হলো কিনা সেটা এই সরকারকেই পরিস্কার করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে এবি পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করি তখন যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আমাদেরকে আন্দোলনে সার্বিক সহোযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন এবি পার্টি তাদের মধ্যে অন্যতম।সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কোন বিরোধপূর্ণ বিষয় নয় তা একে অপরের সম্পূরক। আমরা শুধু বলতে চাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে আওয়ামীলীগের পতন হয়েছে তার বাংলাদেশে রাজনীতি করার আর কোন অধিকার নাই। জনগণ রক্ত দিয়ে তার ফায়সালা করে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যে সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আজ এসেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, বেশীরভাগ দলই খুব ইতিবাচক চিন্তা পোষণ করেছেন। কঠিনতম সময়েও গণমাধ্যম কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীদের এবি পার্টির পাশে থাকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনীতিতে আমরা একটি ঐতিহাসিক সময় পার করছি। আমাদের সামনে সংস্কার ও নির্বাচন। এই জায়গাগুলোতে মিনিমাম একটা ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। সেই ঐক্যের জায়গা ঠিক রেখে দ্বিমতের জায়গায় আমরা লড়াই করতে পারি ও দ্বিমত নিয়ে জনগণের নিকট যেতে পারি।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামনুল হক বলেন, এবি পার্টি অন্যতম মধ্যপন্থি দল, তারা সকল পার্টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধনে ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্যাসিবাদী হাসিনার প্রধান কৌশল ছিলো বাংলাদেশের মানুষকে বিভক্ত করা, সেই বিভক্তি যাতে নতুন করে না হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে রাজনীতিতে এবি পার্টি যাত্রা শুরু করেছিলো। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে দলমতের বাইরে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার পেছনে এবি পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিচারের কাজ যে শুরু হয়েছে কোন পর্যায়ে ক্লোজ করবেন প্রধান উপদেষ্টাকে পরিস্কার করে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে। সংস্কার কোন পর্যায়ে শেষ করবেন তা ক্লিয়ার করুন এবং নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কথা বলুন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অহেতুক দুরত্ব তৈরি করবেন না।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড.আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের মানুষকে জানান দেওয়ায় এবি পার্টিকে ধন্যবাদ জানাই। মানবিক করিডোর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের শক্তিগুলোকে এক থাকতে হবে। সামনের দিনে সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এবি পার্টি একটি দূর্যোককালীন সময়ে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বকীয় অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। আমাদের প্রচলিত সাংবিধানিক কাঠামোর কারনেই ফ্যাসিবাদ জন্ম নেয়, যার ফলে সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এবি পার্টি শুরু থেকেই একটি দায়িত্বশীল রাজনীতি করে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনডিএম এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, এবি পার্টি ও আমরা একসাথে মাঠে সহযাত্রী হিসেবে ছিলাম। কঠিন সময়ে যখন কথা বলতে পারি নাই, তখন যদি একসাথে থাকতে পারি এখনো একসাথে থাকতে পারবো।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গত ফ্যাসিবাদ আমাদেরকে কোন কাজ করতে দেয়নি, কাগজে কলমে আমাদের বয়স ৫ কিন্তু বাস্তবতায় হবে ১০ মাস। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে দায় ও দরদের রাজনীতির কথা আমরাই ৫ বছর ধরে বলছি। ২য় রিপাবলিকের প্রসঙ্গটি আমরাই রাস্তায় নিয়ে আসছি। পরিবারতন্ত্রের বাহিরে রাজনীতির বয়ান আমরাই হাজির করেছি। অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নিবো, ২৫ এর সমস্যা ২৫ ই সমাধান করতে হবে,এখানে অতীতকে নিয়ে আসা যাবে না। ইস্যুবেইজড রাজনীতিকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি। সবার আগে বাংলাদেশ এই স্লোগান আমরাই প্রথম নিয়ে এসেছি। সমস্যা সমাধানের রাজনীতি আমরাই আলোচনায় নিয়ে এসেছি। বিকল্প রাজনীতি কি হবে তা আমরা ইতিমধ্যে জনগণের নিকট তুলে ধরেছি। এখন সময় নতুন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার।
এর আগে সকাল ১০টায় এবি পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয় একাত্তর চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালীর আয়োজন করা হয়। যা কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল, বিজয়নগর, পল্টন সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে এবি পার্টি'র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার, জাহাঙ্গীর কাসেম, বিএম নাজমুল হক, লে. কর্ণেল (অবঃ) দিদারুল আলম, লে. কর্ণেল (অবঃ) হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, আলতাফ হোসাইন, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, হাদিউজ্জামান খোকন, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স সহ এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ।